Moringa

জীবন বৃক্ষ: সজিনা

GT Moringa Tree

সজিনা গছের খরা সহ্য করার ক্ষমতা, বীজ এবং কাটিং থেকে দ্রুত বেড়ে ওঠা আর গাছের ডাল ছাঁটাই (প্রুনিং) করবার পর দ্রুত নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করবার ক্ষমতা থাকার কারণে গাছটিকে আফ্রিকার দেশ সেনেগালে নেবেদাই “never die” নামে ডাকা হয়, ‘জীবন বৃক্ষ’ ` tree of life’ বলেও অভিহিত করা হয়।

‘জীবন বৃক্ষ’ শব্দ দুটি একসাথে উচ্চারণ করলেই এই প্রশ্ন সবার আগে সামনে চলে আসবে, বৃক্ষ তো জীবনই (খাদ্য ও অক্সিজেন) দেয়; তাহলে কেন আলাদা করে ‘জীবন বৃক্ষ’ বলা হবে। আসলে শুধুমাত্র খাদ্য আর অক্সিজেন সরবরাহ করলেই একটি বৃক্ষকে জীবন বৃক্ষ বলা যাবে না। একটি বৃক্ষকে তখনই জীবন বৃক্ষ বলা যাবে, যখন সে একই সাথে খাদ্য, পথ্য, ঔষধ জোগাবে এবং জীবন রক্ষাকারী পানি-মাটি-বাতাসকে পরিশুদ্ধ রাখতে সহায়তা করবে। জীবন বৃক্ষ সকল সৃষ্টিকে একসাথে যুক্ত করবার শক্তি রাখে। এবার প্রশ্ন আসতে পারে, ‘এমন বৃক্ষ কি পৃথিবীতে আছে?’ উত্তর হলো, ‘আছে, আর সেই বৃক্ষটি হলো সজিনা।’ সজিনাকে বলা হয় মানবজাতির জন্য স্রষ্টার আশির্বাদ।

আফ্রিকার দেশ সেনেগাল, বেনিন, ইথিওপিয়া, জিম্বাবুয়ের অপুষ্টি সমস্যা দূর হয়েছে সজিনা পাতাকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে; আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও শিশুদের অপুষ্টি দূর করতে কিছু এলাকায় `School feeding program’ এ সজিনাকে যুক্ত করা হয়েছে। সজিনা শুধুমাত্র মানুষেরই নয় পশু, পাখি আর মাছেরও উৎকৃষ্ট খাদ্য এবং পুষ্টির অনন্য উৎস; কেননা অন্যান্য সকল খাবারের চাইতে সজিনার পুষ্টিগুণ তুলনামূলকভাবে বেশি। সজিনা একই সাথে খাদ্য, পথ্য এবং ঔষধ; এর পাতা-ফল-বীজ-শেকড় কোন অংশই ফেলনা নয়। প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে সজিনা ৩০০ রোগের ঔষধ!

ধর্মীয় গ্রন্থেও গুরুত্ব সহকারে সজিনার উল্লেখ করা হয়েছে। অথর্ববেদে বলা হয়েছে যে, এই সজিনা দেহজ শত্রুর বিনাশসাধন করে, সে শত্রু অর্শ ও ক্রিমি। বেদমন্ত্রেও সজিনার উল্লেখ রয়েছে। কোরআনে সূরা আল ফাত্‌হ এর ২৯ নম্বর আয়াতে যে বর্ণনা রয়েছে, তার অর্থ দাঁড়ায়, “ইঞ্জীল এবং তাওরাতে একটি চারাগাছের বর্ণনা রয়েছে, যা মহান আল্লাহর কুদরতে বীজ থেকে নির্গত হয়, তারপর তা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং পরে কাণ্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে যা চাষীর জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।” বাইবেলের যাত্রাপুস্তক অধ্যায়-১৫:২২-২৬ এ কোরআনে বর্ণিত এই জীবন বৃক্ষ নিয়ে একটি ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে, এই ঘটনা থেকে জানা যায় যে, স্রষ্টা নবী মুসাকে একটি বৃক্ষের কথা জানান যার সাহায্যে খাওয়ার অযোগ্য পানিকে পানযোগ্য করা সম্ভব; এই বৃক্ষটিই সজিনা।

সজিনা বীজ পানি পরিশোধন করে, সজিনা বীজের খৈল এবং পাতার জৈব সার মাটির গুণাগুণ ফিরিয়ে আনে। বাতাস এবং মাটি থেকে কার্বন শুষে নিয়ে নিজের শরীরে ধরে রাখবার অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে সজিনা গাছের। এই অনন্য বৈশিষ্ট্য জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব দূর করবার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পুরো বিশ্বই ঝুঁকিতে রয়েছে; গ্রিনহাউজ গ্যাস, বিশেষ করে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত শতাব্দীতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে ২৩%, নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে ১৯% এবং মিথেনের পরিমাণ বেড়েছে ১০০%। পৃথিবী জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে কৃষি ক্ষেত্রে। কৃষি নির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোতে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। The International Energy Agency (IEA) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২১ বিশ্বব্যাপী কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের হার ৬% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একই বছরে ৩৬.৩ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হয়েছে। দ্রুততম সময়ে এই কার্বন নিঃসরনের প্রভাব কাটাতে সজিনা গাছ আশির্বাদ স্বরূপ। সজিনা গাছ অন্য সব সাধারণ গাছের তুলনায় ২০ গুন বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড মাটিতে ধরে রাখার শক্তি রাখে। হিসাব করলে দেখা যায় একটি পরিপক্ক সজিনা গাছ বছরে প্রায় ৮০ কেজি কার্বন মাটিতে ধরে রাখে। সেই হিসেবে বিশ্ব জুড়ে ৫০০ বিলিয়ন সজিনা গাছ দ্রুত এই সমস্যার সমাধান এনে দেবে নিশ্চিতভাবে।

শামীম পারভেজ সাগর
জিটি মরিঙ্গা লিমিটেড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *